প্রচন্ড তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

প্রচন্ড তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
মৌসুমী তাপপ্রবাহের ফলে সারা দেশের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত।

মৌসুমী তাপপ্রবাহের ফলে সারা দেশের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। এই গরমে সকল বয়সীরাই প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। গরমজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা ও রোগবালাই ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য সুরক্ষায়।

পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন :

পানিস্বল্পতা গরমের খুবই সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে তা মারাত্মক হতে পারে। গরমের কারণে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয় তা হলো পানিস্বল্পতা। প্রচুর ঘামের কারণে পানির সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি, যারা বাইরে অতিরিক্ত গরমের মধ্যে কাজ করে এবং প্রয়োজনমতো পানি পান করার সুযোগ পায় না, তারাই মারাত্মক পানিস্বল্পতায় আক্রান্ত হয় বেশি। পানিশূন্যতার ফলে শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে।

 হিট স্ট্রোকজনিত বিপদ :

গরমে হিট স্ট্রোক হলো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার একটি। হিট স্ট্রোকের আগে হিট ক্র্যাম্প দেখা দেয়, যাতে শরীর ব্যথা করে, দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড  পিপাসা লাগে। পরবর্তী সময়ে হিট এক্সহসশন দেখা দেয়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মাথা ব্যথা করে এবং রোগী অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে হিট স্ট্রোক হতে পারে।

এর লক্ষণগুলো হলো তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়, ঘাম বন্ধ, ত্বক শুষ্ক ও লাল হয়ে যায়, নিঃশ্বাস দ্রুত, নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়, রক্তচাপ কমে যায়, খিঁচুনি হয়, মাথা ঝিমঝিম করে, রোগী অসংলগ্ন ব্যবহার করতে থাকে এবং রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।

খাবারে সমস্যা ও বিভিন্ন পীড়া :

গরমের সময়ে তৃষ্ণা মেটাতে বাইরে বা রাস্তাঘাটে বিক্রেতাদের কাছ থেকে অপরিষ্কার পানি বা শরবত খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া ও বমিতে আক্রান্ত হতে পারে। একই কারণে এ সময়ে পানিবাহিত রোগ যেমনটাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, আমাশয়, জন্ডিস বা হেপাটাইটিস বেশি হয়। গরমে অনেকে প্রচুর পানি পান করে, কিন্তু তাতে পর্যাপ্ত লবণ থাকে না। ফলে শরীরে লবণের অভাব দেখা দেয়। অতিরিক্ত গরমে অনেক সময় খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ওই খাবার খেলে বদহজমসহ অন্যান্য পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে।

যারা রয়েছেন উচ্চ ঝুঁকিতে :

বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু বিশেষ করে যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ যেমনউচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, হার্টের বা ক্যান্সারের রোগী আর যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাই তাপদাহের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

করণীয় :

তাপদাহের সময়  ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। অতীব প্রয়োজনে বাইরে বের হলেও সরাসরি রোদ যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে মাথায় কাপড়, টুপি বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে। পরনের কাপড় হতে হবে হালকা, ঢিলেঢালা, সুতি কাপড়।

যেসব শিল্প-কারখানায় প্রচুর গরমের মধ্যে কাজ করতে হয় সেখানে মাঝেমধ্যে গরম থেকে কিছু সময়ের জন্য বাইরে আসার চেষ্টা করবেন।

রোদ থেকে বাঁচতে শরীরের উন্মুক্ত স্থানে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে, যা রোদে পোড়া থেকে সুরক্ষা দেবে।

প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করতে হবে। লবণযুক্ত পানীয় যেমনস্বাভাবিক পানিতে খাবার লবণ মেশাতে পারেন অথবা খাবার স্যালাইন পান করতে পারেন। তবে তাতে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।

প্রয়োজনমতো গোসল করতে হবে এবং শরীর ঘাম ও ময়লামুক্ত রাখতে হবে এবং চা ও কফি পরিহার করতে পারলে ভালো।

  বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করতে হবে।

গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। খাবার যেন টাটকা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নানা রকম ফল যেমনআম, তরমুজ ও লেবুর শরবত শরীরের প্রয়োজনীয় পানি ও লবণের ঘাটতি মেটাবে।

গরমে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে প্রয়োজনীয় ঘুম দরকার। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নেওয়া যাবে না।