বিশ্ব জনসংখ্যার শীর্ষ ধনী ১ শতাংশ দরিদ্রতম ৬৬ শতাংশের সমান কার্বন নিঃসরণ করছে

বিশ্ব জনসংখ্যার শীর্ষ ধনী ১ শতাংশ দরিদ্রতম ৬৬ শতাংশের সমান কার্বন নিঃসরণ করছে

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দরিদ্রতম ৬৬ শতাংশ বা ৫০০ কোটি মানুষ যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে, একই পরিমাণ নিঃসরণ করছে মাত্র ১ শতাংশ ধনী বা ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনটির সহলেখক ম্যাক্স লাওসন এএফপিকে বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করাটা একটি সমন্বিত চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবাই সমভাবে দায়ী নয়। বিষয়টিকে মাথায় রেখে সেভাবে সরকারি নীতিমালাগুলো তৈরি করা প্রয়োজন।

ম্যাক্স লাওসন বলেন, আপনি যত ধনী হবেন, তত আপনার জন্য ব্যক্তিগত ভোগবিলাস ও বিনিয়োগজনিত কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমানো সহজ হবে। আপনার ওই তৃতীয় গাড়িটির প্রয়োজন নেই কিংবা চতুর্থ অবকাশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, অথবা সিমেন্টশিল্পে বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।

স্টকহোম এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউটের (এসইআই) করা গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ‘ক্লাইমেট ইকুয়ালিটি: আ প্ল্যানেট ফর দ্য নাইনটি নাইন পারসেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন আয়ের মানুষের ব্যক্তিগত ভোগজনিত কার্বন নিঃসরণের প্রবণতা পরীক্ষা করা হয়েছে।

দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮–এ যোগ দিতে বিশ্বনেতারা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো। চলতি মাসের শেষের দিকে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

দীর্ঘ মেয়াদে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ শতাংশে সীমিত রাখতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জিত হবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো হলো—বিশ্বজুড়ে ১ শতাংশ ধনী বা ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ১৬ শতাংশের জন্য দায়ী, অথচ বিশ্বে আয়ের দিক থেকে নিচের সারিতে থাকা ৬৬ শতাংশ মানুষ বা ৫১১ কোটি মানুষ সম্মিলিতভাবে একই পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করছে।

দেশভিত্তিক বিশ্লেষণ করেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফ্রান্সে ১০ বছরে দেশটির দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষ যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে, একই পরিমাণ কার্বন ১ বছরে নিঃসরণ করে মাত্র ১ শতাংশ ধনী।

ফ্রান্সের শীর্ষ ধনী ও লুই ভুইতোঁর প্রতিষ্ঠাতা বেরনা আরনোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কার্বন নিঃসরণে বিনিয়োগের বাইরে ব্যক্তিগত ভোগের কারণেও কার্বন নিঃসরণে ভূমিকা রাখছেন তিনি। ফরাসি নাগরিকেরা গড়ে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে, তার চেয়ে ১ হাজার ২৭০ গুণ বেশি নিঃসরণ করেছেন তিনি।

লাওসন মনে করেন, এ ক্ষেত্রে বড় বার্তাটি হলো, নিঃসরণের মাত্রার ওপর নির্ভর করে নীতিমালাগুলো প্রণয়ন করতে হবে।

লাওসন বলেন, ‘আমরা মনে করি, যে যতটা নিঃসরনের জন্য দায়ী, তাঁর সঙ্গে সমন্বয় করে করারোপের মাধ্যমে জলবায়ু নীতিমালা কার্যকর না করা পর্যন্ত কিছু হবে না। এ ধরনের নীতিমালা কার্যকর করা হলে যেসব মানুষ কার্বন নিঃসরণের জন্য বেশি দায়ী, তাঁদের বড় ধরনের ছাড় দিতে বলা হবে।’

লাওসনের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে থাকতে পারে—কেউ বছরে ১০ বারের বেশি বিমানে চড়লে কর আরোপ কিংবা পরিবেশবান্ধব বা সবুজ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে কর আরোপ করা হবে, তার তুলনায় অন্য বিনিয়োগে অনেক বেশি কর আরোপ করা।

প্রতিবেদনটিতে ব্যক্তিগত ভোগবিলাসজনিত কার্বন নিঃসরণের বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।